Monday, December 02, 2013

গৃহবন্দি ন্যান্সি

মাহমুদ মানজুর : অন্তহীন আতঙ্কে কাটছে ন্যান্সির রাত-দিন। নেত্রকোনার নিজ বাড়িতে একরকম গৃহবন্দি সময় পার করছেন তিনি। সঙ্গে আছে চার বছর বয়সী একমাত্র কন্যা রোদেলা আর ছোট ভাই সানী। সপ্তাহখানেক আগে ময়মনসিংহের শ্বশুরবাড়ি থেকে কন্যা রোদেলাকে নিয়ে বেড়াতে যান নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে। ন্যান্সি জানান, রোদেলার কে.জি. পরীক্ষা শেষ। বহুদিন যাওয়া হয় না জন্মভূমি নেত্রকোনায়। সেখানে বাবা-মা’র ভিটা ছাড়াও নিজের গড়া বাড়িটি শূন্য পড়ে আছে বহুদিন। ছোট ভাইটাও অনেক দিন একা পড়ে আছে সেখানে। তাছাড়া মা চলে যাওয়ার পর নেত্রকোনায় আর সেভাবে ফেরা হয়নি আমার। এসব ভেবে নেত্রকোনায় আসি। অথচ আসার একদিন পর থেকেই শুরু হয়েছে নতুন আতঙ্ক। মনে সারাক্ষণ ভয়, কখন জানি কি হয়ে যায় আমার। ন্যান্সির ভাষ্য মতে, তার এই অন্তহীন আতঙ্কের কারণ পুলিশ। কারণ, নেত্রকোনার বাসায় যাওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকবার পুলিশ ভ্যান এসে দাঁড়ায় তার বাড়ির সামনে। বাড়ির মূল ফটকের সামনে দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর রাত-বিরাতে ঘুরপাক খায় পুলিশ সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত ন্যান্সির বাড়িতে কোন পুলিশ ঢোকেনি কিংবা ন্যান্সিকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। তাই তো ন্যান্সির প্রতি পাল্টা জিজ্ঞাসা ছিল, তাহলে আতঙ্কের কি আছে?

পুলিশ হয়তো তার স্বাভাবিক নিয়মেই আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। ন্যান্সি বলেন, আমি তো এই গ্রামেই জন্মেছি, বড় হয়েছি। আমি তো এই থানা-পুলিশকে চিনি। ইদানীং আরও বেশি চিনতে পেরেছি। ফলে আমি জানি রাত-বিরাতে আমার বাড়ির ফটকের সামনে পুলিশ ভ্যান কেন দাঁড়ায়। কেন তারা আমাকে ও আমার গ্রামের মানুষদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়? এমন দৃশ্য তো আগে কখনও আমরা কেউ দেখিনি। ন্যান্সি আরও বলেন, আমার গ্রামের মানুষ প্রতি রাতেই ভাবেন আমি বোঁধহয় গ্রেপ্তার হয়েছি। প্রতি সকালে আশপাশের মানুষজন আমার বাড়িতে ভিড় জমায়, দেখতে আসে আমি বাসায় আছি নাকি পুলিশ ভ্যানগাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে গেছে! সব মিলিয়ে আমি পুরো বিব্রতকর পরিস্থিতি ফেস করছি। তাছাড়া আমার মনের মধ্যেও দারুণ ভয় ঢুকে গেছে। সারা রাত ঘুমাই না। মনে হয় এই বুঝি পুলিশ ভাইরা ঢন ঢন করে বিকট শব্দে আমার বাড়ির দরজা ধাক্কাবে। আজেবাজে কথা শোনাবে। ঘর সার্চ করবে। হয়রানি করবে। কিংবা থানায় তুলে নেবে। সত্যি বলছি, আমি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি।

কোথায় যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। এদিকে ন্যান্সির প্রতি জিজ্ঞাসা ছিল, এ বিষয়ে সামাজিকভাবে স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা স্বজনদের সঙ্গে কেন আলাপ করছেন না? ন্যান্সি বলেন, মা’ই সব ছিল আমার। মা নেই, তাই আর কেউ নেই। এখন আমি সত্যিকার অর্থেই একা। নেত্রকোনায় এখন আর আমার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। তাছাড়া সরকার কিংবা পুলিশের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার পাশে কে দাঁড়াবে বলুন? কার ঘাড়ে ক’টা মাথা? ন্যান্সি শ্বশুরবাড়িতে ময়মনসিংহে ভালই ছিলেন। অন্তত পুলিশ কেন্দ্রিক আতঙ্কে ভুগতে হয় না তাকে। তাই তো এখন তিনি ময়মনসিংহেই ফিরতে চাইছেন। চাইছেন ঢাকার বিভিন্ন স্টুডিওতে জমে থাকা বেশ কিছু গান রেকর্ডিং শেষ করতে। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে। কারণ, নেত্রকোনায় পেঁৗঁছানোর পর থেকেই চলছে দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সন্তানসম্ভবা তিনি। সব মিলিয়ে এখন চাইলেও নেত্রকোনার গৃহবন্দিত্ব থেকে হুটহাট সিদ্ধান্তে মুক্ত হতে পারছেন না ন্যান্সি। তাহলে? ন্যান্সি বলেন, যার কেউ নেই তার ওপরে আল্লাহ আছেন।

এখন রাত-দিন সেই ভরসাতেই আছি। স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করছি সুন্দর আগামীর। উল্লেখ্য, আপাতত দেশ-বিদেশের স্টেজ শো থেকে দূরে আছেন ন্যান্সি। তবে এরই মধ্যে থেমে থেমে রেকর্ড করছেন আসিফের সঙ্গে দ্বিতীয় দ্বৈত অ্যালবামের রেকর্ডিং। চলছে প্লেব্যাক রেকর্ডিংও। যদিও গেল নভেম্বর জুড়ে হরতাল-অবরোধের কারণে সে অর্থে কোন রেকর্ডিংয়ে অংশ নিতে পারেননি। আরও উল্লেখ্য যে, গেল ২২শে অক্টোবর ন্যান্সি তার আসল (ন্যান্সি জামান) ফেসবুক একাউন্ট স্ট্যাটাসে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি দীর্ঘ মন্তব্য করেন। মূলত এ মন্তব্যের জের ধরেই নানামাত্রিক পুলিশি হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করছেন ন্যান্সি।

No comments:

Post a Comment