Thursday, December 05, 2013

ফেসবুকে সালাহউদ্দিন-বিন-লাদেন ঝড়


সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকজুড়ে আলোচনায় এবার বিএনপির মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ। গ্রেপ্তার আতঙ্কে শীর্ষ থেকে মধ্যম সারির নেতারা গাঁ-ঢাকা দেয়ায় মুখপাত্রের দায়িত্ব পেয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে দলীয় কর্মসূচি ঘোষণার করার প্রেক্ষিতে তাকে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে।

গোপন স্থান থেকেই ভিডিও ক্যাসেটের মাধ্যমে কঠিন কঠিন কর্মসূচি ঘোষণা করায় বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে নিয়ে ফেসবুকে নানা মন্তব্য করা হচ্ছে। আবার অনেকে কার্টুন তৈরি করে ছেড়ে দিচ্ছেন ফেসবুকের পাতায়। অনেকেই তাকে নিয়ে নান ব্যাঙ্গ বিদ্রুপ-ঠাট্টায় মেতে উঠেছেন। কেউ কেউ তাকে আল-কায়দা নেতা ওসামা বিন লাদেনের সঙ্গে মিলিয়ে নাম রাখছেন সালাহউদ্দিন-বিন-লাদেন।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমেদ, এমকে আনোয়ার এমপি, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞা, বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আব্দুল আউয়াল মিন্টু ও বিশেষ সহকারী এডভোকেট শামসুর রহমান শিমূল বিশ্বাস রয়েছেন কারাবন্দী। অন্যদিকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ অন্যান্য শীর্ষ নেতারা গ্রেপ্তারের ভয়ে রয়েছেন আত্মগোপনে।বিএনপির পক্ষ থেকে এটাকে রাজনৈতিক কৌশল হিসাবে দেখা হচ্ছে।

এছাড়া বিএনপির দফতরের দায়িত্বে থাকা রুহুল কবির রিজভী আহমেদকে গভীর রাতে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয় থেকে গ্রেপ্তারের পর দলে একটা শূন্যতা তৈরি হয়।তবে সেই শূন্যস্থান পুরণে মুখপাত্র হিসাবে নাম ঘোষণা করা হয় সালাহউদ্দিন আহমেদে।

কিন্তু ওই দিন তার ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাসায় পুলিশি তল্লাশির কারণে অনেকটা গ্রেপ্তার ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি।

ফলে তিনি প্রকাশ্যে না এলেও ভিডিও ক্যাসেটের মধ্যেম দলীয় কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছেন। আর ঘোষিত কর্মসূচি পালিতও হচেছ ভালোভাবে।

অজ্ঞাত স্থান থেকে একরকম ‘লাদেন’ স্টাইলে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি ঘোষণা নিয়ে সমালোচনার অন্ত নেই।

গোপন স্থানের ভিডিও বার্তায়  একের পর কর্মসূচি ঘোষণা করায় রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। পরে তা রাজনীতির মাঠ গড়িয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ঝড় তোলে। ফেসবুকের প্রায় বাংলাদেশি সব ব্যবহারকারীই সালাহউদ্দিন আহমেদের এমন কাণ্ড নিয়ে স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। সমালোচনাকারীরা বলছেন, গ্রেপ্তারের ভয়ে আত্মগোপনে থেকে আবার লাদেন স্টাইলে ভিডিও বার্তা কর্মসূচি প্রচার করে নিজেদের দুর্বলতা আর অসহায়ত্বকে প্রকাশ করছেন। এটা রাজনীতি ও রাজনীতিকদের জন্য একধনের লজ্জার। এটা রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে কাম্য নয়। তবে তারা বিএনপি নেতাদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারেও প্রশ্ন তুলেছেন।

বিএনপির ও ১৮ দলের নেতারা বলছেন সরকারের ‘বাকশালী’দমননীতির কারণেই দলটি এরকম কৌশল নিয়েছেন।এটা সরকারের দমননীতি রুখতে ‘রাজনৈতিক‘কৌশল। যদিও তাদের অনেক নেতাই ইতোমধ্যে বিভিন্ন মামলায় কারাগারে রয়েছেন।

অন্যদিকে সরকার সমর্থকরা মনে করছেন,বিএনপি নেতাদের এমন আত্মগোপন ও লাদেন স্টাইলে ভিডিও বার্তা প্রচার তাদের দেউলিয়াত্ব প্রমাণ করছে। এফএনএস fns

যেভাবে ভিডিও তৈরি ও প্রচার করছে বিএনপি



ঢাকা: রাজনীতিতে এখন আলোচনার অন্যতম উপাদান হচ্ছে বিএনপির ভিডিও বার্তা। যে ভিডিও বার্তা চালু করেছিলেন আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেও বলেছেন, লাদেনের মতো ভিডিও টেপ পাঠাচ্ছে বিএনপি।

এই ‘লাদেন টেপ’ কিভাবে তৈরি হচ্ছে আর কিভাবেই তা পাঠানো হচ্ছে মিডিয়া কর্মীদের কাছে তা নিয়ে রয়েছে নানা কৌতূহল। অনুসন্ধ্যানে বেড়িয়ে এসেছে চমকপ্রদ তথ্য। বিএনপি ঘরানার এক সাংবাদিক নেতার পরামর্শেই এই লাদেন টেপ তৈরি ও বিতরণ হচ্ছে। আর এর নেপথ্যে রয়েছে সম্প্রতি বন্ধ হয়ে যাওয়া একটি মিডিয়ার দু’জন কর্মী।

কখনো উত্তরায়, কখনো বনানীর বিএনপি পল্লীতে আবার কখনো গুলশান ও বাড্ডায় তৈরি হচ্ছে রাজনৈতিক ঘোষণা সম্পর্কিত ভিডিও টেপ। সেখান থেকে চলে আসে পল্টনে এক মিডিয়া কর্মীর এডিটিং হাউসে। সেখানে ভয়েস টিউনিং করে সিডিতে করে পাঠানো হয় টিভি রিপোর্টারদের কাছে। এক একদিন এক এক স্থানে ভিডিও হচ্ছে তা সালাউদ্দিনের পোশাক ও পেছনের ব্যকগ্রাউন্ড দেখলেই বোঝা যায়। তবে প্রথম ভিডিও রেকর্ডিংটি হয়েছিল সংসদ ভবনের সামনের ন্যাম ফ্ল্যাটে।

এই ভিডিও তৈরি ও বিতরণের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরা ও গাড়ি। তবে বিষয়টি যাতে ধরা না পরে এজন্য কখনো আগে-ভাগে ওই টেপ প্রচার করে না তারা। অন্য টিভি চ্যানেলে যাওয়া দু’একঘণ্টা পরে প্রচারিত হয় ওই চ্যানেলে।

তবে এই টেপ তৈরি ও প্রচারের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কোন অনুসন্ধান চালানো হয়নি কিংবা গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বাঁধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেনি। তবে কঠোর গোপনীয়তা অবলম্বন করা হচ্ছে এই টেপ তৈরির ক্ষেত্রে।

লাদেনের পথেই হাটছে বিএনপি


নাইন ইলেভেনে আমেরিকার ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে হামলার পরে বিশ্বব্যাপী আলকায়েদা বিরোধী অভিযান পরিচালনা করেছিল আমেরিকা ও তার মিত্র শক্তি। সে সময়ে অনেকটা আত্মগোপনে চলে গিয়েছিল আল কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন। পাহাড়ের গভীর গুহার ভেতরে থেকে ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে হুমকি-ধামকি দিচ্ছিলেন আমেরিকাকে। আর এগুলো প্রচারিত হতো আল-জাজিরা টেলিভিশনে।

একই পথে হাটছেন দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। অবরোধ ডেকে আত্মগোপনে চলে গেছেন নেতারা। কমেন্ট নেয়ার জন্য কোন পর্যায়ের নেতাদের খুঁজে পাচ্ছেন না সাংবাদিকরা। এরই মধ্যে ইমেইলে বিবৃতি দিচ্ছেন, অজ্ঞাত স্থান থেকে টেলিফোনে কমেন্ট দিচ্ছেন। সর্বশেষ ভিডিও ফুটেজ পাঠিয়ে অবরোধ কর্মসূচি বৃহস্পতিবার বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়েছে নয়া মুখপাত্র সালাহ উদ্দিন আহমেদ। এর আগে তিনি বিবৃতিও দিয়েছেন ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে। শুধুমাত্র অনুপস্থিত আল জাজিরা টেলিভিশন। তবে তারও কোন অভাব অনুভুত হয়নি। কারণ দু’ডজনেরও বেশি টেলিভিশনে প্রচারিত হয়েছে ওই বিবৃতি।

এমনই বার্তা ও বিবৃতির মাধ্যমেই চলছে প্রধান বিরোধী দল বিএনপির রাজনৈতিক কার্যক্রম। দলের যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ায় অন্য কেন্দ্রীয় নেতারা আত্মগোপনে রয়েছেন। বর্তমানে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও গুলশানে দলীয় চেয়ারপারসনের কার্যালয় নেতাশূন্য। এখন শুধু মিডিয়ায় বার্তা ও বিবৃতি পাঠানোর মাধ্যমেই দলের অবস্থান জানান দিচ্ছেন বিএনপির বর্তমান যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদ ও ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতারের পর বিএনপির কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগরের কোনো নেতার চেহারা টেলিভিশনে দেখা যায়নি। গণমাধ্যম কর্মীরাও নেতাদের খুঁজে পাচ্ছেন না। বেশির ভাগ নেতার  সেলফোনও বন্ধ। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও প্রকাশ্যে আসছেন না। তবে রোববার বিকেলেও এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বর্তমান সরকারের রাষ্ট্রশাসনের কোনো অধিকার নেই। তফসিল ঘোষণা করে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছেন প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোটের পুনর্গঠিত সরকার সম্পূর্ণ বেআইনি ও অসাংবিধানিকভাবে সরকার পরিচালনা করছে। আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশনের তফসিল দেশের মানুষ প্রত্যাখ্যান করে গণতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অকাতরে প্রাণ বিসর্জন দিচ্ছে।

অন্যদিকে রোববার দুপুরে অজ্ঞাত স্থান থেকে কয়েকটি টেলিভিশনে পাঠানো এক ভিডিও ফুটেজে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও বর্তমান মুখপাত্র সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, চলমান সংকট সমাধানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে সম্মানজনকভাবে পদত্যাগের আহ্বান জানাচ্ছি। ভিডিও বার্তায় তিনি আরো বলেন, দমন-পীড়ন, হত্যা-নির্যাতন এবং মামলা-হামলা চলমান আন্দোলনকে আরো বেগবান করবে। এখনো সময় আছে, সরকারকে আহ্বান জানাব, গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মীদের মুক্তি দিন। সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করুন। নির্দলীয় সরকারের দাবি মেনে নিন।

প্রসঙ্গত, রুহুল কবির রিজভী গ্রেফতার হওয়ার পর সালাহউদ্দিন আহমেদকে দফতর ও দলের মুখপাত্রের দায়িত্ব দেয়া হয়। শনিবার দুপুরের পর থেকে তাকে আর জনসম্মুখে পাওয়া যায়নি। কেন্দ্রীয় কার্যালয়েও যাননি তিনি। এছাড়া অন্য কেন্দ্রীয় নেতাদেরও জনসম্মুখে দেখা যাচ্ছে না।

ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক সাদেক হোসেন খোকাসহ জাতীয় নেতাদের নামে দায়ের হওয়া একের পর এক মামলার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে ঢাকা মহানগর বিএনপি এক ই-মেইল বার্তায় বলা হয়, পতন আসন্ন জেনে জালিম সরকার বিএনপির ত্যাগী ও সংগ্রামী নেতাদের কণ্ঠ রোধ করার জন্য একের পর এক সাজানো মিথ্যা মামলা দিয়ে যাচ্ছে। সরকার তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে সারা ঢাকা মহানগরীতে বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে তার দায়ভার বিএনপির ঘাড়ে চাপানোর অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

Monday, December 02, 2013

গৃহবন্দি ন্যান্সি

মাহমুদ মানজুর : অন্তহীন আতঙ্কে কাটছে ন্যান্সির রাত-দিন। নেত্রকোনার নিজ বাড়িতে একরকম গৃহবন্দি সময় পার করছেন তিনি। সঙ্গে আছে চার বছর বয়সী একমাত্র কন্যা রোদেলা আর ছোট ভাই সানী। সপ্তাহখানেক আগে ময়মনসিংহের শ্বশুরবাড়ি থেকে কন্যা রোদেলাকে নিয়ে বেড়াতে যান নেত্রকোনায় নিজ বাড়িতে। ন্যান্সি জানান, রোদেলার কে.জি. পরীক্ষা শেষ। বহুদিন যাওয়া হয় না জন্মভূমি নেত্রকোনায়। সেখানে বাবা-মা’র ভিটা ছাড়াও নিজের গড়া বাড়িটি শূন্য পড়ে আছে বহুদিন। ছোট ভাইটাও অনেক দিন একা পড়ে আছে সেখানে। তাছাড়া মা চলে যাওয়ার পর নেত্রকোনায় আর সেভাবে ফেরা হয়নি আমার। এসব ভেবে নেত্রকোনায় আসি। অথচ আসার একদিন পর থেকেই শুরু হয়েছে নতুন আতঙ্ক। মনে সারাক্ষণ ভয়, কখন জানি কি হয়ে যায় আমার। ন্যান্সির ভাষ্য মতে, তার এই অন্তহীন আতঙ্কের কারণ পুলিশ। কারণ, নেত্রকোনার বাসায় যাওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিদিনই কয়েকবার পুলিশ ভ্যান এসে দাঁড়ায় তার বাড়ির সামনে। বাড়ির মূল ফটকের সামনে দিয়ে কিছুক্ষণ পর পর রাত-বিরাতে ঘুরপাক খায় পুলিশ সদস্যরা। তবে এখন পর্যন্ত ন্যান্সির বাড়িতে কোন পুলিশ ঢোকেনি কিংবা ন্যান্সিকে কোন জিজ্ঞাসাবাদ করেনি। তাই তো ন্যান্সির প্রতি পাল্টা জিজ্ঞাসা ছিল, তাহলে আতঙ্কের কি আছে?

পুলিশ হয়তো তার স্বাভাবিক নিয়মেই আপনার বাড়ির সামনে দিয়ে আসা-যাওয়া করছে। ন্যান্সি বলেন, আমি তো এই গ্রামেই জন্মেছি, বড় হয়েছি। আমি তো এই থানা-পুলিশকে চিনি। ইদানীং আরও বেশি চিনতে পেরেছি। ফলে আমি জানি রাত-বিরাতে আমার বাড়ির ফটকের সামনে পুলিশ ভ্যান কেন দাঁড়ায়। কেন তারা আমাকে ও আমার গ্রামের মানুষদের মাঝে আতঙ্ক ছড়ায়? এমন দৃশ্য তো আগে কখনও আমরা কেউ দেখিনি। ন্যান্সি আরও বলেন, আমার গ্রামের মানুষ প্রতি রাতেই ভাবেন আমি বোঁধহয় গ্রেপ্তার হয়েছি। প্রতি সকালে আশপাশের মানুষজন আমার বাড়িতে ভিড় জমায়, দেখতে আসে আমি বাসায় আছি নাকি পুলিশ ভ্যানগাড়িতে তুলে থানায় নিয়ে গেছে! সব মিলিয়ে আমি পুরো বিব্রতকর পরিস্থিতি ফেস করছি। তাছাড়া আমার মনের মধ্যেও দারুণ ভয় ঢুকে গেছে। সারা রাত ঘুমাই না। মনে হয় এই বুঝি পুলিশ ভাইরা ঢন ঢন করে বিকট শব্দে আমার বাড়ির দরজা ধাক্কাবে। আজেবাজে কথা শোনাবে। ঘর সার্চ করবে। হয়রানি করবে। কিংবা থানায় তুলে নেবে। সত্যি বলছি, আমি গৃহবন্দি হয়ে পড়েছি।

কোথায় যাবো কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। এদিকে ন্যান্সির প্রতি জিজ্ঞাসা ছিল, এ বিষয়ে সামাজিকভাবে স্থানীয় কোন জনপ্রতিনিধি কিংবা স্বজনদের সঙ্গে কেন আলাপ করছেন না? ন্যান্সি বলেন, মা’ই সব ছিল আমার। মা নেই, তাই আর কেউ নেই। এখন আমি সত্যিকার অর্থেই একা। নেত্রকোনায় এখন আর আমার পাশে দাঁড়ানোর কেউ নেই। তাছাড়া সরকার কিংবা পুলিশের বিরুদ্ধে গিয়ে আমার পাশে কে দাঁড়াবে বলুন? কার ঘাড়ে ক’টা মাথা? ন্যান্সি শ্বশুরবাড়িতে ময়মনসিংহে ভালই ছিলেন। অন্তত পুলিশ কেন্দ্রিক আতঙ্কে ভুগতে হয় না তাকে। তাই তো এখন তিনি ময়মনসিংহেই ফিরতে চাইছেন। চাইছেন ঢাকার বিভিন্ন স্টুডিওতে জমে থাকা বেশ কিছু গান রেকর্ডিং শেষ করতে। সেটাও সম্ভব হচ্ছে না বেশ কিছুদিন ধরে। কারণ, নেত্রকোনায় পেঁৗঁছানোর পর থেকেই চলছে দেশজুড়ে হরতাল-অবরোধ। যা এখনও অব্যাহত রয়েছে। অন্যদিকে সন্তানসম্ভবা তিনি। সব মিলিয়ে এখন চাইলেও নেত্রকোনার গৃহবন্দিত্ব থেকে হুটহাট সিদ্ধান্তে মুক্ত হতে পারছেন না ন্যান্সি। তাহলে? ন্যান্সি বলেন, যার কেউ নেই তার ওপরে আল্লাহ আছেন।

এখন রাত-দিন সেই ভরসাতেই আছি। স্বপ্ন দেখার চেষ্টা করছি সুন্দর আগামীর। উল্লেখ্য, আপাতত দেশ-বিদেশের স্টেজ শো থেকে দূরে আছেন ন্যান্সি। তবে এরই মধ্যে থেমে থেমে রেকর্ড করছেন আসিফের সঙ্গে দ্বিতীয় দ্বৈত অ্যালবামের রেকর্ডিং। চলছে প্লেব্যাক রেকর্ডিংও। যদিও গেল নভেম্বর জুড়ে হরতাল-অবরোধের কারণে সে অর্থে কোন রেকর্ডিংয়ে অংশ নিতে পারেননি। আরও উল্লেখ্য যে, গেল ২২শে অক্টোবর ন্যান্সি তার আসল (ন্যান্সি জামান) ফেসবুক একাউন্ট স্ট্যাটাসে বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে একটি দীর্ঘ মন্তব্য করেন। মূলত এ মন্তব্যের জের ধরেই নানামাত্রিক পুলিশি হয়রানির শিকার হয়ে আসছেন বলে অভিযোগ করছেন ন্যান্সি।

পর্নো ছবি বাড়িয়ে দেয় পুরুষের প্রতারণার হার!

সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় জানা দেখা গিয়েছে যে যারা নিয়মিত পর্নো ছবি দেখে সম্পর্কের ক্ষেত্রে তাদের প্রতারণা করার সম্ভাবনা বেশি থাকে। এই ব্যাপারটা কি আপনার ক্ষেত্রেও সত্যি?

এমন কোনো পুরুষ মানুষ দেখেছেন কখনো যে কোনোদিন একটি পর্নো ছবিও দেখেনি? উত্তরটা নিশ্চয়ই ‘না’? অনেকেই হয়তো উল্টো প্রশ্ন করে বসতে পারে যে ‘এটাও কি সম্ভব?’ এমন কি অনেক নারীই এটা মেনেও নেয় যে পুরুষ মানুষরা তো পর্নো ছবি দেখবেই এবং এটাই একটি স্বাভাবিক ব্যাপার।
কিছু সংখ্যক নারী আবার তাদের স্বামী অথবা প্রেমিকের পর্নো ছবি দেখার বিষয়টি একেবারেই মেনে নিতে পারেন না। আর মেনে না নিতে পারার অন্যতম একটি কারণ হলো যে তারা মনে করেন পর্নো ছবি দেখলে তাদের ভালোবাসার মানুষটি তাদের সাথে প্রতারণা করতে পারে। মজার ব্যাপার হলো, গবেষণায় তাদের আশঙ্কার এই বিষয়টিই সত্য প্রমাণিত হয়েছে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে পর্নো ছবিতে আসক্তি থাকলে সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রতারণার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
পর্নো ছবির সাথে প্রতারণার সম্পর্ক
গবেষণার একজন লেখক ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার মারলিয়া গুইনের মতে, পর্নো ছবি দেখলে যে কোনো একজন যৌনসঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত থাকার বিষয়টি থাকে না। তখন অসংখ্য আকর্ষণীয় যৌন সঙ্গীর সঙ্গ পাওয়ার আকাক্সক্ষা সৃষ্টি হয়। পুরুষদের মনে ধারণা ঢুকে যায় যে তাদের স্ত্রী ছাড়াও আশপাশে এমন অনেকেই আছে যাদের সাথে যৌন সম্পর্কে জড়ানো যায়। একই সঙ্গীর সাথে বিশ্বস্ত যৌন সম্পর্কের বদলে তখন তারা প্রতারণার পথে এগিয়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা যা বলেন


[পর্নো ছবি] সেক্সোলজিস্ট ও মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ধনঞ্জয় গাম্ভিরের মতে পর্নো ছবি দেখলে প্রতারণা করার সাহস বেড়ে যায় এবং প্রতারণা করার বিষয়টিকে খুবই স্বাভাবিক একটি ব্যাপার মনে হতে শুরু করে। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যাদের দেহ পসারিণীদের কাছে যাওয়ার অভ্যাস আছে তাদের পর্নো ছবি দেখার প্রবণতাও বেশি থাকে।

মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মিলান বলকৃষানের মতে যারা হুট হাট সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে এবং কে কী ভাবছে এসব চিন্তা করে না তাদের মধ্যে পর্নো ছবির প্রভাব বেশি পড়ে। পর্নো ছবি দেখে তাদের প্রতারণা করার সাহস ও আগ্রহ দুটাই আরো বেড়ে যায়। ফলে তারা সমাজের জন্য বেশ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে।

পর্নো ছবি দেখা একটি অসুস্থ বিনোদন। বিশেষ করে পর্নো ছবিতে যারা আসক্ত হয়ে যায় তাদের জীবনে নানান রকম সমস্যার সৃষ্টি হয়। জীবনের সাথে পর্নো ছবির সাজানো কাহিনিকে মিলিয়ে ফেলার কারণে নানান রকম সাংসারিক অশান্তিও দেখা দেয়। তাই সময় থাকতেই এধরনের আসক্তি থেকে নিজেকে মুক্ত করা উচিত।

ডিজে পার্টিতে সিসার নেশায় উন্মাতাল তরুণ-তরুণীরা

নিকষ কালো অন্ধকারের মাঝে লেজার লাইটের ঝলকানি। হিন্দি ও ইংরেজি পপ গানের কান ফাটানো শব্দ। এর মধ্যে সিসা আর সিগারেটের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হওয়ার জোগাড়। আর নেশার ঘোরে চলছে বেসামাল তরুণ-তরুণীদের উন্মাতাল নাচ। রাজধানীতে নিত্যদিনের ডিজে পার্টিতে এটা এক সাধারণ দৃশ্য। প্রতিরাতেই বেশ কিছু কমিউনিটি সেন্টার, সামাজিক ক্লাব ও পাঁচ তারকা হোটেলে চলে এ ধরনের পাটি। আর ডিজে পার্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে এখানে আসা যুবক-যুবতীরা মেতে ওঠে জমজমাট সিসা, মদ ও ইয়াবা সেবনে। এক মাস ধরে চালানো যুগান্তরের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে ডিজে পার্টির অন্দরমহলের সেসব অজানা কাহিনী। ‘ডিজে’ মানে ডিস্কো জকি। অর্থাৎ গানের তালে তালে নাচের উন্মাদনা তৈরির জন্য মাইক্রোফোনের মাধ্যমে যারা নানা ধরনের উত্তেজক শব্দ উচ্চারণ করে তারাই ডিস্কো জকি। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে ডিজে পার্টি আয়োজনের শীর্ষে রয়েছে তিনটি গ্র“প। এরা ডিজে পার্টির নামে সিসা, অবৈধ মদ ও ইয়াবাসহ মাদক সেবনের নিয়মিত আড্ডা বসাচ্ছে। সূত্র জানিয়েছে, এই তিন গ্র“পের এক নম্বরে আছে জামিল, নাতাশা, টুম্পা ও ডিজে লেমন গ্র“প। ব্ল্যাক আই এন্টারটেইনমেন্ট নামের অখ্যাত ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের ব্যানারে এরা বিভিন্ন ক্লাব, কমিউনিটি সেন্টার ও পাঁচ তারকা হোটেলে ডিজে পার্টির আয়োজন করছে। গত ৮ জুন হোটেল র‌্যাডিসনে এদের আয়োজিত ডিজে পার্টিতে অংশ নেয়া উচ্ছৃংখল যুবকরা মাতাল অবস্থায় রাস্তায় নেমে আসে। তারা পথচারীদের ওপর হামলা চালায়। এ সময় নৌবাহিনীর এক অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন। এ ঘটনায় ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি হয়। ডিজে পার্টি আয়োজনের নামে মাদক সেবনের আড্ডা বসানোর অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে, ব্ল্যাক আই এন্টারটেইনমেন্টের স্বত্বাধিকারী জামিল হুসাইন ওরফে ডিজে জামিল যুগান্তরকে বলেন, তাদের ডিজে পার্টিতে কোনো ধরনের মাদক সেবন করা হয় না। তবে অনুষ্ঠানে যারা আসেন তারা মদ-বিয়ার পান করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তথ্য অনুযায়ী রাজধানীতে ডিজে পার্টির আয়োজক আরেকটি গ্র“প হচ্ছে রাকিব, মনীষা, পরী ও নোমান গ্র“প। এরা হোটেল রিজেন্সি, ওয়েস্টিন ও র‌্যাডিসনে দীর্ঘদিন ধরেই ডিজে পার্টির আয়োজন করে আসছে। গোয়েন্দা পুলিশের তালিকায় আরেকটি গ্র“পে আছে ডিজে বাদল, মনসুর ও শাহরিয়ার। এরা বিভিন্ন সামাজিক ক্লাবের হলরুম ভাড়া নিয়ে ডিজে পার্টি আয়োজনের আড়ালে মাদক সেবনের আড্ডা বসিয়ে আসছে।


ডিজে পার্টির অন্দরমহলে :  ১৫ তলা এ ভবনের ১২ তলায় ডিজে পার্টির আয়োজন চলছে। ভবনের নিচে প্রতিমন্ত্রীর গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখা। ভবনের কিছুটা দূরে পুলিশের অবস্থান। ভেতরে তখন তিল ধারণের ঠাঁই নেই। ঘরের মাঝখানে খোলা জায়গায় হিন্দি গানের তালে তালে তরুণ-তরুণীদের উন্মাতাল নাচ। ঘরের বিভিন্ন কোনায় টেবিল-চেয়ার পাতা। সেখানে বসে অনেকেই রাংতার পাতায় সাজিয়ে নিচ্ছেন ইয়াবার গুঁড়ো। এরপর রাংতার নিচে ম্যাচের কাঠির আগুন দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে ধোঁয়া। সেই ধোঁয়া বিশেষ একটি চোঙ্গার মাধ্যমে মুখ দিয়ে নয়, নাক দিয়ে টেনে নেয়া হচ্ছে। অন্ধকারেও বোঝা যাচ্ছে তাদের নেশাগ্রস্ত চেহারা লাল হয়ে উঠেছে। এক কোণে সিসার আসর বসেছে। বড় বড় কয়েকটি সিসার পাত্র সাজিয়ে নল দিয়ে ধোঁয়া টানছেন কয়েকজন কিশোর-কিশোরী। ঘরের এক কোণে বড় একটি কাঠের তাকে সাজিয়ে রাখা নানা ব্র্যান্ডের বিদেশী মদ-বিয়ার। ৫/৬ জন বেয়ারা গ্লাসে গ্লাসে মদ ঢেলেও কুলিয়ে উঠতে পারছেন না। ভেতরে এই যখন অবস্থা তখন হঠাৎ একজন ‘মাস্তান’ হাজির হলেন মদ বিক্রির কাউন্টারে। তিনি কোমর থেকে পিস্তল বের করে রাখলেন টেবিলের ওপর। এবার পুরো একটি মদের বোতল দিয়ে দিতে বললেন। এতে গণ্ডগোল বেধে গেল। হইচই থামাতে এগিয়ে এলেন পার্টির নিরাপত্তা রক্ষায় নিয়োজিত বিশেষ টিম (বাউন্সার)। তারা অস্ত্রধারীকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু অস্ত্রধারী মোটেও দমলেন না। এবার তিনি আরও উদ্ধত হয়ে তার অস্ত্রটি উঁচু করে ধরে বললেন, ‘আমি ছাত্রলীগের নেতা। এখানে পার্টি চালাতে হলে আমাকে মদ দিতে হবে। একপর্যায়ে তিনি এক বোতল মদ ও ইয়াবাসহ সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে একটি টেবিল দখল করলেন। ওদিকে ইয়াবা আর সিসার নেশায় উন্মত্ত আরেকজন মাঝবয়সী। তিনি একজন তরুণীকে পাঁজাকোলা করে তুলে ধরেছেন। তরুণীটিকে তিনি বাইরে নিয়ে যেতে চান। কিন্তু পার্টির আয়োজকরা বাইরে মেয়ে নিয়ে যেতে দিতে রাজি নন। এ নিয়ে কিছুক্ষণ ওই মাঝবয়সীর সঙ্গে পার্টির আয়োজকদের ধস্তাধস্তি হল। এ অনুষ্ঠানে দেখা যায় ডিজে হিমু, বাপ্পি, আনার, মারুফ, সুমি, রাজন, প্রিয়া ও ডিজে আরিনকে। তারা নেচে চলেছেন বিভোর হয়ে। রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পার্টিতে অতিথিও বাড়তে থাকে। আয়োজকদের একজন জানালেন পার্টি চলবে ভোর ৪টা পর্যন্ত।
রাতভর পার্টি দিনভর ঘুম : এই ডিজে পার্টিতে কথা হল রাজধানীর একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফারজানা খান নিঝুমের সঙ্গে। তিনি জানান, সপ্তাহের দু’একটা দিন বয়ফ্রেন্ডদের নিয়ে ডিজে পার্টিতে তিনি স্ট্রেস (অবসাদ) কাটাতে আসেন। এতে অন্যদিনগুলোতে পড়ালেখার এনার্জি পান। তবে ডিজে পার্টি থেকে ফিরে পরদিন তিনি ইউনিভার্সিটিতে যেতে পারেন না। পরের দিনটা ঘুমিয়ে কাটান। নিঝুমের সঙ্গে পার্টিতে এসেছেন তার বয়ফ্রেন্ড মনজুর মোর্শেদ সেজান। তিনি বলেন, ঢাকায় আনন্দ করার মতো জায়গা নেই। তাই ডিজে পার্টি দেয়া উচিত। পুলিশ ও র‌্যাবের ভয় নিয়ে পার্টিতে আসেন বলে পার্টি পুরোপুরি উপভোগ করতে পারেন না। সংক্ষিপ্ত কথার মাঝে মাঝে তিনি বুকভরে সিসার ধোঁয়া নিচ্ছিলেন। আর তার বান্ধবী নিঝুমের হাতে জ্বলন্ত সিগারেট।
নিরাপত্তার দায়িত্বে পুলিশ : ডিজে পার্টির অনুষ্ঠানস্থলের কিছুটা দূরেই উত্তরা পশ্চিম থানার ৬ জন পুলিশ দায়িত্ব পালন করছেন। দায়িত্ব পালনরত এসআই (উপপরিদর্শক) সাইদুল ইসলামকে জিজ্ঞেস করা হয়, এখানে অবৈধ মাদকের আড্ডা চললেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছেন না কেন? জবাবে তিনি বলেন, যেখানে অনুষ্ঠান হচ্ছে সেটির মালিক এক প্রতিমন্ত্রীর ছেলে। তাই এখানে অভিযান চালানোর ক্ষমতা তাদের নেই। বরং তারা এসেছেন নিরাপত্তা দিতে। বহুতল ওই ভবনের নিরাপত্তা প্রহরী শহিদুল জানান, ভবনের ১২ ও ১৩তম ফ্লোরের মালিক একজন প্রতিমন্ত্রীর ছেলে। তাই এখানে পুলিশ বা র‌্যাব কখনোই আসে না। ডিজে পার্টির আয়োজক শাহরিয়ার জানান, ‘এ জায়গাটি নিরাপদ হওয়ার কারণে এখানে নিশ্চিন্তে তারা অনুষ্ঠান করতে পারেন। তাই টিকিট বিক্রিও জমজমাট। আয়োজক মুনসুর জানান, প্রতি রাতে অনুষ্ঠানের টিকিট বিক্রি থেকে তাদের এক/দেড় লাখ টাকা আয় হয়। এর বাইরে মদ, বিয়ার, ইয়াবা ও সিসা বিক্রি থেকে আরও লাখখানেক থাকে।’ তিনি বলেন, জায়গাটা প্রতিমন্ত্রীর ছেলের হলেও থানাকে খুশি রাখতে হয়। এসআই জহির ও এসআই এমদাদ থানার ‘বকশিশ’ নিয়ে যান।
অনুমোদনবিহীন : ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) অধ্যাদেশ অনুযায়ী রাজধানীতে কোনো অনুষ্ঠান আয়োজন করতে হলে পুলিশের অনুমোদন নিতে হয়। অুনুষ্ঠানের প্রকৃতি বিবেচনা করে সন্তুষ্ট হলে অনুমতি দেয় পুলিশ। মহানগর পুলিশের জনসংযোগ শাখা থেকে জানানো হয়েছে, ডিজে পার্টিগুলো পুলিশের অনুমোদনের তোয়াক্কা করে না। তারা কোনো না কোনো প্রভাবশালীকে ম্যানেজ করে তার ছত্রছায়ায় অনুষ্ঠান আয়োজন করে। আর পাঁচ তারকা হোটেলে ডিজে পার্টি আয়োজিত হলে সেখানে অবস্থানরত বিদেশী অতিথিদের বিষয়টি বিবেচনা করে পুলিশকে নীরব থাকতে হয়। তবে সূত্র জানিয়েছে, সরকারদলীয় একজন প্রভাবশালী নেতার ছেলে পুলিশের বিষয়টি সামাল দেন। পার্টিতে পুলিশি ঝামেলা হবে না বলে তিনি নিশ্চয়তা দেন। বিনিময় তাকে ‘সুবিধা’ দিতে হয়। ডিজে পার্টির আয়োজকদের কয়েকজন যুগান্তরকে জানিয়েছেন, ‘প্রভাবশালী ওই রাজনীতিকের ছেলেকে ‘সুবিধা’ দেয়া হলে পার্টিতে পুলিশ বা র‌্যাব ঝামেলা করে না।’ পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গুলশান ও বনানী এলাকায় অনুষ্ঠিত ডিজে পার্টির জন্য কেউ পুলিশের অনুমতি চান না। তবে থার্টিফার্স্ট নাইটের (৩১ ডিসেম্বর রাতের) অনুষ্ঠান করার সময় পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন আসে। এসব আবেদনেও ডিজে পার্টি না লিখে ‘সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান’-এর জন্য অনুমতি চাওয়া হয়। জানতে চাইলে পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার লুৎফুল কবির যুগান্তরকে বলেন, অনেক ডিজে পার্টিতে মাদক বেচাকেনার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। খবর পাওয়া মাত্র তারা অভিযান চালান। কোনো ছাড় দেয়া হয় না। ওদিকে ডিজে পার্টি সংশ্লিষ্ট কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, যেখান থেকে মাসোয়ারা পেতে বিলম্ব হয় পুলিশ শুধু সেখানেই অভিযান চালায়। মূলত পুলিশকে ম্যানেজ করেই ডিজে পার্টি চলে।
অভিযান চালাতে গিয়ে : সূত্র জানিয়েছে, ডিজে বাদল, মনসুর ও শাহরিয়ার গ্র“প উত্তরা ৩নং সেক্টরে নিয়মিত ডিজে পার্টির নামে সিসা, ইয়াবাসহ মাদক সেবনের জমজমাট মাদক ব্যবসার আয়োজন করে এটা সবারই জানা।  এরপর নিতান্ত বাধ্য হয়ে  সেখানে অভিযান চালাতে যান মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে অভিযান না চালিয়ে রাত ২টায় তারা ফিরে যান। সূত্র জানায়, অভিযান চালানোর সব প্রস্তুতি নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের ফিরে আসতে হয়। কেননা অভিযান পরিচালনার সময় তারা জানতে পারেন বহুতল এ ভবনের ডিজে পার্টি আয়োজনের দুটি ফ্লোরের মালিক সরকারের একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি। এরই মধ্যে উপর মহল থেকে একাধিক ফোন আসতে থাকে। এক পর্যায়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা এক রকম পালিয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক লুৎফর রহমান যুগান্তরকে বলেন, তারা পালিয়ে যাননি। প্রথমে তারা ঘটনাস্থল শনাক্ত করতে পারছিলেন না। পরে পর্যাপ্ত ফোর্স না পাওয়ায় কৌশলগত কারণে পিছু হটে আসেন। তবে অভিযান চালাতে গিয়ে কর্মকর্তাদের পালিয়ে আসার বিষয়টি স্বীকার করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ ইকবাল যুগান্তরকে বলেন, ‘এই অধিদফতরের একটি অংশ আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত। এ কারণে ডিজে পার্টির নামে মাদকের আড্ডায় অভিযান চালাতে গিয়েও তারা বারবার ফিরে আসেন। ওইদিন রাতে তো তারা রীতিমতো পালিয়ে আসেন।’
তিনি বলেন, ‘উল্টো আমাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে তারা সেই রাতে পর্যটন কর্পোরেশনের আওতাধীন একটি বারে ‘হামলা’ চালিয়েছে। তাদের এই আচরণ রহস্যজনক এবং এতে আমার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ভাবমূর্তি ক্ষুণœ হয়েছে।-এফএনএস