এফএনএস ডেস্ক: সমকামী বোনকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে বাবা-মায়ের সম্মতিতেই তাঁর ঘরে নিজের এক বন্ধুকে ঢুকিয়ে দিতেন দাদা। এটা কলকাতারই ঘটনা। সেই বন্ধু দিনের পর দিন ধর্ষণ করতেন বন্ধুর বোনকে। এই প্রক্রিয়াকেই বোনের সমকামী মনোভাব শেষ করার উপযুক্ত পদ্ধতি বলে মনে করেছিলেন দাদাটি। একটা সময়ে আর সহ্য করতে না পেরে বাড়ি থেকে পালিয়ে সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা একটি সংগঠনের অফিসে যায় সেই মেয়ে। অনেক ঝড়ঝাপ্টার পর দক্ষিণ কলকাতার এক পাড়ায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতে শুরু করে নিজের ‘সঙ্গী’-কে নিয়ে। ২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্টের রায়ের পরে সেই মেয়ে ভেবেছিল, হয়তো এ বার নিজের যৌন অধিকার সম্পর্কে সোচ্চার হওয়া যাবে। বুধবার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে আবার সেই অধিকারের জায়গাটা অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে।
এ দিন রায় ঘোষণার পরেই কলকাতার জায়গায়-জায়গায় বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে সমকামীদের বিভিন্ন সংগঠন। মূল জমায়েত হয়েছিল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে। ব্যানারে, স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজপথ। আন্দোলনকারীদের বক্তব্যের সারমর্ম একটাই ‘এই রায়ে শুধু সমকামীদের অধিকার খর্ব হল না। এটি গণতন্ত্রের উপর কুঠারাঘাত।” জমায়েতে ছিলেন মধ্য তিরিশের যুবক অনীশ রায়চৌধুরী। বললেন, “সকাল থেকে আমার ৭৯ বছরের মা বারংবার ফোনে বলছেন, ‘তোদের মুক্তি আর দেখে যেতে পারলাম না।’ মা আমার সব চেয়ে বড় শক্তি।” রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিংহের বক্তব্য, “এত দিন ৩৭৭ ধারা সম্পর্কে লোকের ধারণা কম ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আজ এত ফলাও করে রায় ঘোষণা করায় সমকামী ও রূপান্তকামীরা সাধারণের চোখে আরও বেশি ‘অপরাধী’ বলে প্রতিভাত হবেন এবং তাঁদের উপরে অত্যাচার বাড়বে।”
২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট তার রায় জানানোর পরেই সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় একাধিক সংগঠন। তাদের যুক্তি ছিল, সমকামিতা স্বীকৃতি পেলে দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ধাক্কা খাবে। এদের আবেদনের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে সমকামীদের পক্ষে পাল্টা আবেদন করেন ১৯ জন বাবা-মা, যাঁদের প্রত্যেকের ছেলে কিংবা মেয়ে সমকামী। এঁদের মধ্যে কলকাতার চার জন ছিলেন। অনীশের মা এবং বাবা, তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতার মা, জগদীশ জানা-র মা এবং দেবজ্যোতি ঘোষের মা। শীর্ষ আদালতের এ দিনের রায়ে তাঁরাও স্তম্ভিত। তীর্থঙ্করের মা বীণা গুহঠাকুরতার বক্তব্য, “হ্যাঁ, আমার ছেলে ‘গে’। চোর-ডাকাত তো নয়। তাঁকে নিজের ইচ্ছেমতো জীবন কাটানোর অধিকার দিতে হবে।”
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা সমকামী আন্দোলনের কর্মী কৌশিক গুপ্ত অন্য একটি বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি প্রজননের প্রয়োজন ছাড়া কোনও যৌনসম্পর্ক হয়, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে সেটাও অপরাধ বলে গণ্য হবে।”
সমকামী অধিকার আন্দোলনের জাতীয় স্তরের কর্মী, কলকাতার পবন ধর অভিযোগ করেন, এ দিনের রায়ের পরেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিচ্ছিন্ন ভাবে পুলিশের অত্যাচার শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লি, মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সমকামীদের প্রতিবাদ মিছিল আটকে দিয়েছে। পবন বলেন, “আমার বাবার মৃত্যুর দিন যতটা শোক পেয়েছিলাম, এ দিনের শূন্যতাবোধ অনেকটা তেমনই। আমরা যে অপরাধী নই, রোগী নই, তা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট সেই চেষ্টাটাকেই নস্যাৎ করে দিল।” তবে তাঁরা হাল ছাড়বেন না বলে জানান পবন। সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’-র মালবিকা একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক ইচ্ছায় একসঙ্গে থাকবেন বা যৌন সম্পর্ক করবেন। তা নিয়ে রাষ্ট্রের এত আপত্তি কেন আজও বুঝলাম না।”
রূপান্তরকামী মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি অন্য ভাবে দেখছেন। বললেন, “৩৭৭ ধারায় নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলা নেই। পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে আছে। তা ছাড়া, ওই আইনের তো অস্তিত্বই চোখে পড়ে না। তা হলে এত হইচই কীসের?”
সমকামীদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’, ‘প্রত্যয়’, ‘সাথী’-সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিরোধী। বুধবার শীর্ষ আদালতের এই রায় ঘোষণার পরে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে জমায়েত হয়ে তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
- See more at:
TAG: rape, shamokami, gey, gay, sex, sexual relation, India, Kalkata, Bangladesh, Dhaka, Victoria's Secret Fashion Show, Lakers,Uruguay,Vs Fashion Show, Gisele Bundchen, Demi Lovato, Kelly Clarkson, Mega Millions,fairnews24,Hotter,Lesbian Sex,
এ দিন রায় ঘোষণার পরেই কলকাতার জায়গায়-জায়গায় বিক্ষোভ-মিছিল শুরু করে সমকামীদের বিভিন্ন সংগঠন। মূল জমায়েত হয়েছিল অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে। ব্যানারে, স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজপথ। আন্দোলনকারীদের বক্তব্যের সারমর্ম একটাই ‘এই রায়ে শুধু সমকামীদের অধিকার খর্ব হল না। এটি গণতন্ত্রের উপর কুঠারাঘাত।” জমায়েতে ছিলেন মধ্য তিরিশের যুবক অনীশ রায়চৌধুরী। বললেন, “সকাল থেকে আমার ৭৯ বছরের মা বারংবার ফোনে বলছেন, ‘তোদের মুক্তি আর দেখে যেতে পারলাম না।’ মা আমার সব চেয়ে বড় শক্তি।” রূপান্তরকামী রঞ্জিতা সিংহের বক্তব্য, “এত দিন ৩৭৭ ধারা সম্পর্কে লোকের ধারণা কম ছিল। সুপ্রিম কোর্ট আজ এত ফলাও করে রায় ঘোষণা করায় সমকামী ও রূপান্তকামীরা সাধারণের চোখে আরও বেশি ‘অপরাধী’ বলে প্রতিভাত হবেন এবং তাঁদের উপরে অত্যাচার বাড়বে।”
২০০৯ সালে দিল্লি হাইকোর্ট তার রায় জানানোর পরেই সেই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যায় একাধিক সংগঠন। তাদের যুক্তি ছিল, সমকামিতা স্বীকৃতি পেলে দেশের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ধাক্কা খাবে। এদের আবেদনের বিরুদ্ধে আবার সুপ্রিম কোর্টে সমকামীদের পক্ষে পাল্টা আবেদন করেন ১৯ জন বাবা-মা, যাঁদের প্রত্যেকের ছেলে কিংবা মেয়ে সমকামী। এঁদের মধ্যে কলকাতার চার জন ছিলেন। অনীশের মা এবং বাবা, তীর্থঙ্কর গুহঠাকুরতার মা, জগদীশ জানা-র মা এবং দেবজ্যোতি ঘোষের মা। শীর্ষ আদালতের এ দিনের রায়ে তাঁরাও স্তম্ভিত। তীর্থঙ্করের মা বীণা গুহঠাকুরতার বক্তব্য, “হ্যাঁ, আমার ছেলে ‘গে’। চোর-ডাকাত তো নয়। তাঁকে নিজের ইচ্ছেমতো জীবন কাটানোর অধিকার দিতে হবে।”
কলকাতা হাইকোর্টের আইনজীবী তথা সমকামী আন্দোলনের কর্মী কৌশিক গুপ্ত অন্য একটি বিষয়েও দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, “স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যদি প্রজননের প্রয়োজন ছাড়া কোনও যৌনসম্পর্ক হয়, তা হলে সুপ্রিম কোর্টের আজকের রায়ে সেটাও অপরাধ বলে গণ্য হবে।”
সমকামী অধিকার আন্দোলনের জাতীয় স্তরের কর্মী, কলকাতার পবন ধর অভিযোগ করেন, এ দিনের রায়ের পরেই দেশের বিভিন্ন শহরে বিচ্ছিন্ন ভাবে পুলিশের অত্যাচার শুরু হয়ে গিয়েছে। দিল্লি, মুম্বইয়ের বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ সমকামীদের প্রতিবাদ মিছিল আটকে দিয়েছে। পবন বলেন, “আমার বাবার মৃত্যুর দিন যতটা শোক পেয়েছিলাম, এ দিনের শূন্যতাবোধ অনেকটা তেমনই। আমরা যে অপরাধী নই, রোগী নই, তা মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম। সুপ্রিম কোর্ট সেই চেষ্টাটাকেই নস্যাৎ করে দিল।” তবে তাঁরা হাল ছাড়বেন না বলে জানান পবন। সমকামীদের অধিকার নিয়ে কাজ করা ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’-র মালবিকা একরাশ ক্ষোভ নিয়ে বলেন, “দু’জন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পারস্পরিক ইচ্ছায় একসঙ্গে থাকবেন বা যৌন সম্পর্ক করবেন। তা নিয়ে রাষ্ট্রের এত আপত্তি কেন আজও বুঝলাম না।”
রূপান্তরকামী মানবী বন্দ্যোপাধ্যায় বিষয়টি অন্য ভাবে দেখছেন। বললেন, “৩৭৭ ধারায় নারীর সঙ্গে নারীর সম্পর্ক নিয়ে কিছু বলা নেই। পুরুষের সঙ্গে পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে আছে। তা ছাড়া, ওই আইনের তো অস্তিত্বই চোখে পড়ে না। তা হলে এত হইচই কীসের?”
সমকামীদের নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে একই সঙ্গে ক্ষুব্ধ এবং হতাশ ‘স্যাফো ফর ইক্যুয়ালিটি’, ‘প্রত্যয়’, ‘সাথী’-সহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। এই সংগঠনের মতে, সুপ্রিম কোর্টের এই রায় গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার বিরোধী। বুধবার শীর্ষ আদালতের এই রায় ঘোষণার পরে অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসের সামনে জমায়েত হয়ে তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। একই সঙ্গে শীর্ষ আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে আন্দোলনে চালিয়ে যাওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন তাঁরা। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
- See more at:
TAG: rape, shamokami, gey, gay, sex, sexual relation, India, Kalkata, Bangladesh, Dhaka, Victoria's Secret Fashion Show, Lakers,Uruguay,Vs Fashion Show, Gisele Bundchen, Demi Lovato, Kelly Clarkson, Mega Millions,fairnews24,Hotter,Lesbian Sex,
No comments:
Post a Comment